হাওজা নিউজ এজেন্সি: আয়াতুল্লাহিল উজমা জাওয়াদী আমুলী (দা.বা.)-এর একটি গ্রন্থে এই শুবহা (সন্দেহ)-এর উত্তর প্রদান করা হয়েছে যে, “(শিয়া ও মুহিব্বিনদের প্রতি) হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা’আতের প্রতিশ্রুতি কী গুনাহগারদের গুনাহ করার প্রতি আরও সাহসী করে তোলে না?
প্রশ্ন: শাফা’আতের প্রতিশ্রুতি কী গুনাহগারদের গুনাহের প্রতি উদ্ধত ও সাহসী করে না?
উত্তর: শাফা’আত একটি সুচিকিৎসক ঔষধের মতো—যা কোনো বিবেকবান মানুষকে রোগে আক্রান্ত হতে উৎসাহিত করে না; বরং এটি কেবল রোগীদের নিরাময়ের একমাত্র উপায়।
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা‘আত লাভের শর্তসমূহ:
কারও ওপর এই শাফা’আত কার্যকর হওয়ার জন্য কয়েকটি অপরিহার্য শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
১. সে মুশরিক, কাফির, মুনাফিক অথবা নাসিবি না হওয়া।
২. গুনাহ থেকে সত্যিকারের অনুতাপ ও অনুশোচনা করা।
৩. আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) ও আহলে বাইত (আ.)-এর বেলায়েতকে পূর্ণ হৃদয়ে কবুল করা।
৪. শিয়া ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধর বা সাইয়্যেদদের প্রতি ভালোবাসা রাখা।
৫. নবীর (সা.) বংশধরদের কষ্ট না দেওয়া।
শাফা’আতের মূল শর্ত হলো গুনাহ থেকে নাদামত (নিজেকে নিরাপদ রাখা) এবং ঈমানের মৌলিক ভিত্তি। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَىٰ
(তারা শাফা’আত করবে না কেবল তাদের জন্য ছাড়া যাদের প্রতি [আল্লাহ] সন্তুষ্ট। (সূরা আল-আম্বিয়া: ২৮)
কেন শাফা’আত গুনাহের প্রতি সাহস যোগায় না?
১. আল্লাহ তা‘আলা সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি যে, কাদের উপর শাফা’আত হবে; সুতরাং কেউ নিশ্চিতভাবে এর উপর ভরসা করে বসতে পারে না।
২. প্রকৃত মু’মিন সর্বদা আল্লাহর আজাবের ভয় এবং তাঁর রহমতের আশার মাঝে দোলায়মান থাকে।
৩. পবিত্র কুরআন স্পষ্ট সতর্কবাণী দিয়েছে যে, কেউ নিজেকে আল্লাহর মকর (পরিকল্পনা) থেকে নিরাপদ মনে করবে না।
৪. গুনাহের উপর অটল থাকা কুফর ও হৃদয়ের কঠোরতায় পরিণত হতে পারে।
হযরত ফাতিমা যাহরা (সা.আ.)-এর শাফা’আত কখনো গুনাহগারদের উদ্ধত করে না; বরং এটি তাদের জন্য একটি আশার আলো—যারা ঈমানের পথে পিছলে পড়েছে, কিন্তু ফিরে আসার এবং অতীতের ভুলগুলো সংশোধনের সংকল্প রাখে। এই মহান অনুগ্রহ অন্ধকারে একটি জ্যোতির মতো, যা অনুতপ্তদের পথ দেখায় এবং তাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়।
সূত্র: তাসনিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৭০–২৭৩।
আপনার কমেন্ট